বাংলাদেশ ভূ-খন্ডে কারখানাভিত্তিক দুগ্ধ শিল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় ১৯৪৬ সালে। পাবনা-সিরাজগঞ্জ জেলায় নামমাত্র মূল্যে দুধ বিক্রয় হতো, সেহেতু দুগ্ধ ব্যবসায়ীরা কোলকাতা-কে মার্কেট হিসাবে চিহ্নিত করে ‘ন্যাশনাল নিউট্রিশন কোম্পানী’ নামে একটি সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ার অভিপ্রায়ে সিরাজগঞ্জ জেলার লাহিড়ী মোহনপুর এলাকায় দুগ্ধ কারখানা স্থাপন করার জন্য মেশিনারীজ নিয়ে আসে। কারখানার স্থাপনা কার্যক্রম শুরু হলেও দেশ বিভক্তির কারণে ১৯৪৭ সালে এ উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালে জনাব মুখলেছুর রহমান তাঁর নিজস্ব সম্পদ বিনিময় সূত্রে কারখানাটির মালিকানা গ্রহণ করেন। কারখানাটির নাম পরিবর্তন করে ‘‘ইষ্টার্ন মিল্ক প্রডাক্টস’’ দেয়া হয় এবং স্থাপনা কাজ ১৯৫২ সালে সমাপ্ত করা হয়। কারখানা হতে তখন দুধ, ঘি, মাখন ইত্যাদি দুগ্ধজাত পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করে কলকাতা শহরে স্বল্প পরিসরে কিছু দিন মিল্কভিটা নামে বাজারজাত করা হতো ।
১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি সমবায় ব্যবস্থাপনায় এনে সমবায় ভিত্তিক প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমিতি গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং পুরানো নাম সংশোধন করে প্রতিষ্ঠানটির নাম রাখা হয় ‘‘ইষ্টার্ন মিল্ক প্রডিউসার্স কো-অপারেটিভ ইউনিয়ন লিঃ’’। প্রাথমিকভাবে সমবায় ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ফলপ্রসূ না হওয়ায় ১৯৬৮ সালে সমবায় মার্কেটিং সোসাইটি কর্তৃক উক্ত কারখানাটির দায়িত্বভার গ্রহণ করা হয়। একই সময়ে আর্থিকভাবে দেউলিয়াত্বের কারণে ঢাকার তেজগাঁ এ ‘‘অষ্টো ডেয়রী’’ নামে বোতলজাত দুগ্ধ উৎপাদন ও বিপণনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সমবায় মার্কেটিং সোসাইটি কর্তৃক দায়িত্বভার গ্রহণ করা হয়। সমবায় মার্কেটিং সোসাইটিও প্রতিষ্ঠান দু'টোর আর্থিক অবস্থার উন্নতি অর্জনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়। প্রতিষ্ঠান দু’টি সীমিতভাবে কিছুদিন উৎপাদন ও বিপণন কর্মকান্ড পরিচালনা হলেও সঠিক ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক সহযোগিতার অভাবে ১৯৭০ সালের প্রথমদিকে কারখানা দু’টোর উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
দেশের জনগণের পুষ্টি চাহিদা পুরণে দুগ্ধ সংকট নিরসনের পদ্ধতি নিরূপনের জন্য ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি) ও ডেনমার্ক’এর আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্সী ড্যানিডা’এর সহায়তায় দুই পরামর্শক যথাক্রমে মিঃ ক্যাসট্রপ ও মিঃ নেলসন কর্তৃক এ দেশের দুগ্ধ শিল্প নিয়ে স্টাডি করা হয়। বাংলাদেশ সরকার স্টাডি দু’টির সুপারিশ বিবেচনা করে পূর্বতন কারখানা দু’টির দায়-দেনা পরিশোধ করে নতুন এলাকায় ‘‘সমবায় দুগ্ধ প্রকল্প’’ নামে ১৯৭৩ সালে একটি দুগ্ধ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। দুগ্ধ উৎপাদনকারী কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির নিমিত্তে সরকারের ১৩.১২ কোটি টাকা ঋণ সহায়তায় দেশের পাঁচটি দুগ্ধ এলাকায় নিম্নোক্ত দু’টি মৌলিক আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কারখানা স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে ১৯৭৭ সালে ‘‘বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড’’ নামকরণ করা হয়।